সেকুলারিজম, মৌলবাদ ও দক্ষিন এশিয়া।

ধর্মীয় মৌলবাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে- ধর্মের প্রাচীন মূল্যবোধ রাষ্ট্র এবং সমাজে প্রতিষ্ঠা করা। ধর্মীয় মৌলবাদীরা নিজেদের এজেন্ডা জাস্টিফাই করার জন্য ধর্মীয় গ্রন্থকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।

দক্ষিণ এশিয়াতে হিন্দুত্ববাদীদের পুঁজি হচ্ছে ইসলামোফোবিয়া! আর ইসলামিস্টদের পুঁজি হচ্ছে কাফের-ফোবিয়া। তাদের আরেকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সেকুলারিজমের প্রতি ঘৃণা এবং আধুনিকীকরণকে প্রত্যাখ্যান করা। এই দুই দলের মূল লক্ষ্য আদতে একই! রাষ্ট্রের ধর্মীয়করণ এবং সংখ্যালঘু-নির্যাতন!

সাভারকারের বই “হিন্দুত্বঃ হু ইজ এ হিন্দু” (১৯২৩) এবং মওদুদীর বই “জিহাদ” (১৯২৭) এই উপমহাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদের বিষবৃক্ষ রোপণ করেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি ইসলামিস্টদের মিশন বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ। আর কাশ্মীরের ইসলামিকরণ সম্ভবত দ্বিতীয় ধাপ। অধিকাংশ মৌলবাদী দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যম সহিংসতা। এখন প্রশ্ন আসে এই যে, এই বিষবৃক্ষের শিকড়ে আঘাত করার ক্ষমতা কি সেকুলারিজমের আছে? এর উত্তর “হ্যাঁ” কিংবা “না” যে কোনোটাই হতে পারে! নির্ভর করে কোন ধরনের সেকুলারজিমের কথা বলা হচ্ছে! ডগম্যাটিক সেকুলারিজম নাকি কন্সটিটিউশনাল সেকুলারিজম?রিলিজিয়াস ফান্ডামেন্টালিজম এবং ডগম্যাটিক সেকুলারিজম কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ! ডগম্যাটিক সেকুলারিজমের মূল বক্তব্য হচ্ছে- “ধর্ম মানেই জনগণের আফিম” কিংবা “ধর্ম শুধুই কুসংস্কার”।

এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে, ‍ডগম্যাটিক সেকুলারিজম এবং কন্সটিটিউশনাল সেকুলারিজম এক নয়! সাংবিধানিক সেকুলারিজম একটি বাস্তববাদী মেকানিজম, যা দিয়ে রাষ্ট্রের ধর্মীয় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যায়। সাংবিধানিক সেকুলারিজম ধর্মকে তুচ্ছ বা মহৎ কোনটাই মনে করে না!ডগম্যাটিক সেকুলারিজম জনগণের সাথে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ মানুষের মধ্যে সর্বশক্তিমানের কাছে মাথা নত করার এক ধরনের স্পিরিচুয়াল নিড আছে। একে এক ফুঁতে উড়িয়ে দেয়া একটা অবাস্তবিক স্ট্র্যাটেজি! তাহলে আবার সেই পুরাতন প্রশ্নে ফিরে যাই, ধর্মীয় মৌলবাদের বিষবৃক্ষের শিকড়ে আঘাত করার ক্ষমতা কি সেকুলারিজমের আছে? আছে। কিন্তু ডগম্যাটিক সেকুলারিজম দিয়ে সমাজ বদল অসম্ভব। সংবিধানের মাধ্যমে প্রথমে রাষ্ট্রের ধর্মীয় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি।দুঃখজনকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম-প্রধান রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। আর এই দুই রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ইসলামিকরণ ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের বিস্তারে হাওয়া দিচ্ছে!

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *