কারারক্ষীদের সহায়তায় জেলে বসে জঙ্গি কার্যক্রম

কারাবন্দী জঙ্গিদের কার্যক্রমে সাময়িক ছেদ পড়লেও কিছু কারারক্ষীর সহায়তায় তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

তাদের সঙ্গীদের কারণে কিছু বন্দী কারাগারের বাইরে থাকাকালীন সময়ের চেয়েও বেশি উগ্র হয়ে উঠেছে।পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, সভা, মতাদর্শ প্রচার, সদস্য নিয়োগ করা, গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ফোনে অন্য কর্মীদের নির্দেশসহ নানা কর্মকাণ্ড তারা কারাগারে বসেই করছে। আরও উদ্বেগের বিষয়, কারারক্ষীরা শুধু অর্থের জন্যই বন্দীদের সহায়তা করছেন না বরং তারা আদর্শগত কারণে করছেন।সাম্প্রতিক একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৩ জন কারারক্ষীকে জঙ্গি সংগঠনের জন্য কাজ করতে দেখা গেছে। কারারক্ষীরা বন্দীদের ফোন সরবরাহ ও বার্তা বহন করে।পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি ২০১৬ থেকে আগস্ট ২০২১ এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৯৬৩ জন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।কর্মকর্তারা বলেছেন, জঙ্গিদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে সংযোগ বা সামাজিক মাধ্যমে উগ্র মতাদর্শের প্রচারের জন্য যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তারা অনেকেই কারাগারে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হয়ে উঠেছে।কারাগারে থেকেই জঙ্গি নেতা হয়ে ওঠেন ২০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ আল নোমান।তিনি সামাজিক মাধ্যমে উগ্রবাদীদের কন্টেন্ট শেয়ার ও লাইক দিতেন। ২০১৮ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৫ মাস কারাগারে থাকাকালীন তিনি কয়েকজন জঙ্গির সঙ্গে দেখা করেন।নোমান জামিনে বেরিয়ে তৎকালীন নব্য জেএমবি প্রধান আবু মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আবুর নির্দেশ অনুযায়ী, নোমান ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরি করতে শিখেন এবং ২০২০ সালের ২৪ জুলাই পল্টনের একটি পুলিশ বক্সে একটি আইইডি স্থাপন করেন।গত বছরের ৫ নভেম্বর তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়।পুলিশের দাবি, ডিবি গত বছরের ৩০ মার্চ ২ জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে এবং জানতে পারে যে জেএমবি, নব্য-জেএমবি এবং হুজি কারাগারে তথ্য ও জিনিসপত্র আনা-নেওয়ার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।সিটিটিসি বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের ইনচার্জ রহমত উল্লাহ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে আসা জঙ্গিবাদের সমর্থকদের ওপর তারা নিবিড়ভাবে নজর রাখছেন।এদিকে, জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি কারা অধিদপ্তরে আরেকটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। একটি সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন জানান, তারা প্রতিবেদন পেয়েছেন।তিনি বলেন ‘যেহেতু এটির যাচাই এবং প্রমাণের প্রয়োজন, আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার আগে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করব।’সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য তারা কারা কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছেন কিন্তু তারা এখনও কোনো সাড়া পাননি।সূত্র জানায়, গত বছরের ২৮ অক্টোবর চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।কর্নেল আবরার জানান, তারা পুলিশের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছেন। তিনি বলেন, কারাগারে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি যৌথ দল গঠন করা হবে।তিনি বলেন, ‘এখন, আমরা সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ওপর কঠোরভাবে নজর রাখছি এবং অন্য বন্দীদের উপর নজর রাখছি যেন তারা জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে।’

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *