চুক্তি ভিত্তিক ওয়াজ করা, নির্দিষ্ট বেতনে  ইমামতি করা, কুরআন শিক্ষা দেওয়া, মাদরাসায় শিক্ষকতা করা, স্কুলের ধর্ম বিষয়ে শিক্ষকতা করা ইত্যাদি কি ধর্ম ব্যবসা?

না, এগুলো ধর্ম ব্যবসা নয়। বরং তা জায়েজ।

 এসব বিষয়ের জন্য পারিশ্রমিক বা অর্থ দাবী করা বৈধ কি না সে বিষয়ে এ মূলনীতিটি জানা দরকার:

ক. আপনি যদি কাউকে এ সব কাজের জন্য নিয়োগ দেন বা দায়িত্ব দেন তাহলে তার এ সব কাজের পারিশ্রমিক দাবী করা বৈধ (অবশ্য তারা অন্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত করবে)। কারণ এর পেছনে তাদের মেধা, সময় ও শ্রম ব্যয় হয়। সে আপনার এখানে আসতে বাধ্য ছিল না। কিন্তু আপনি তাকে এনেছেন।

যেমন: সরকার, কোনও প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা কোনও ব্যক্তি যদি কাউকে বেতন ভিত্তিক মসিজদের ইমামতি, কুরআনের শিক্ষকতা, দাওয়াতি কাজ ইত্যাদি উদ্দেশ্যে নিয়োগ দান করে তাহলে তাহলে বেতন দেওয়া ও নেয়া উভয়টি জায়েজ।

খ. আর কেউ যদি স্বেচ্ছায় এসে ওয়াজ করে বা মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকে  তারপর বলে, আপনাদেরকে ওয়াজ-নসিহত শুনালাম এখন এর বিনিময়ে আমাকে টাকা দিন। তাহলে তা হারাম হবে। কারণ এখানে কেউ তাকে নিয়োগ দেয় নি। বরং আল্লাহ তাকে তার বিনিময় দান করবেন।

কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,

{ وَمَآ أَسۡـَٔلُكُمۡ عَلَيۡهِ مِنۡ أَجۡرٍۖ إِنۡ أَجۡرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ }

‘আর আমি (নূহ আলাইহিস সালাম) তোমাদের কাছে এর জন্য কোনো প্রতিদান চাই না; আমার পুরস্কার তো সৃষ্টিকুলের রবের কাছেই আছে।” [Surah Ash-Shu`arâ’: 109] 

সুতরাং নিজের ইচ্ছায় দাওয়াতি কাজ হিসেবে ওয়াজ করা বা বক্তৃতা দেয়া আর অন্য কোন পক্ষ থেকে ওয়াজ বা বক্তৃতা দেয়ার জন্য নিয়ে আসা বা দায়িত্ব দেওয়া- এ দুটি বিষয়ে পার্থক্য আছে। 

প্রথম ক্ষেত্রে বক্তৃতা দেওয়া বা ওয়াজ-নসিহত করার ক্ষেত্রে সে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এটা তার ইচ্ছাধীন বিষয়। 

সুতরাং সে এ কাজের জন্য কারও কাছে পারিশ্রমিক বা বিনিময় দাবী করতে পারবে না। কিন্তু ২য় ক্ষেত্রে সে চুক্তিবদ্ধ হিসেবে আপনার এখানে আসতে ও বক্তৃতা দিতে বাধ্য। অত:এব এ ক্ষেত্রে তার পারিশ্রমিক দাবী করাও বৈধ। (তবে সীমাতিরিক্ত অবশ্যই পরিত্যাজ্য)

আরেকটি কথা হল, কোন বক্তা যদি অতিরিক্ত টাকা দাবী করেও তাহলে তাকে পরিত্যাগ করার সুযোগ আছে। এমন বক্তাকে দাওয়াত দেওয়া আবশ্যক নয়। কিন্তু যদি তার সাথে আর্থিক চুক্তি করা হয় তাহলে চুক্তি পূরণ করা আবশ্যক। চুক্তি করার পর আবার ‘বেশি টাকা নেয়’ বলে তার বদনাম করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আসলে ওয়াজ কমিটি অর্থ বেশি দিয়ে হলেও নামকরা ও সুরেলা বক্তা আনে অনেক সময় তাদের নিজেদের স্বার্থে। কেনান সাধারণত: নামকরা ও সুকণ্ঠি অধিকারী বক্তা আনা হলে মাহফিলে প্রচুর লোক সমাগম হয়। আর তারা এটাকে তারা নানা ধান্ধাবাজির কাজে লাগায়। এই সুবাদে বড় অংকের অর্থ কালেকশন করে বা জনসাধারণের মধ্যে বিশেষ কিছু প্রচার-প্রসার করার সুযোগ নেয়। 

সুতরাং যেসব ওয়াজ কমিটি মাহফিল জমিয়ে নিজেদের পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারকারী বা শিরক-বিদাত, জাল-জয়িফ হাদিস, উদ্ভট গল্প ও কিচ্ছা-কাহিনী প্রচারকারী বক্তাদেরকে 

বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে তারাই মূলত ধর্মব্যবসায়ী।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *