আজকের বাংলাদেশে যে ধর্মীয় উল্লম্ফন তার সূত্রপাত সমাজ, রাষ্ট্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পরিবার সর্বত্র এই ধর্মকে দিয়ে বিদ্বেষ, সহিংসতা, বিভ্রান্তি এবং বিভেদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তা সরানো কারো পক্ষে সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আমরা হয়তো স্বীকার করতে চাই না কিন্তু একথা সত্য যে, আজকের বাংলাদেশে যে ধর্মীয় উল্লম্ফন তার সূত্রপাত ও বাড়-বাড়ন্ত এদেশে রাজনৈতিক শক্তির হাত ধরেই হয়েছে। একপক্ষ তাদেরকে কম মূল্য দিলে আরেক পক্ষের ঘাড়ে চড়ে বসে তারা রাজনীতি করেছে। কখনোই তাদেরকে ঘাড়-ছাড়া হতে হয়নি। ফলে সমাজ, রাষ্ট্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পরিবার সর্বত্র এই ধর্মকে দিয়ে বিদ্বেষ, সহিংসতা, বিভ্রান্তি এবং বিভেদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন এই জগদ্দল পাথরকে সরানো কারো পক্ষে সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের এই ধর্মভিত্তিক উন্মাদনা গোটা বিশ্বেই এখন আলোচনার বিষয় বটে। হৃদয় মণ্ডল, আমোদিনী পাল কিংবা তারও আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনাসমূহ বেশ ফলাও করেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। প্রতিবেশি ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা চরম আকার ধারণ করায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেক ক্ষেত্রে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কিংবা রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর বিবিসি বাংলা “বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের শক্তিবৃদ্ধি ঘটছে যেসব কারণে” শীর্ষক এক বিশ্লেষণে দাবি করছে যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক শক্তিগুলো নানা কারণে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছে। এটাও নতুন আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক ভাবে বাঙালি বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের যদি উগ্রবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তাহলে তার চড়া মূল্যই দিতে হবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের নাগরিককে।যে চ্যালেঞ্জের কথা দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম সেটা দিয়েই শেষ করি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সামনে যে ক’টি বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই ধর্মভিত্তিক উন্মাদনা এবং রাজনীতির চ্যালেঞ্জ। একুশ শতকের আধুনিক বিশ্বে যে চ্যালেঞ্জ অনেক দেশই মোকাবিলা করতে পারেনি বলে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তানকে আমরা এক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে পারি। এমনকি ভারতের মতো উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রটিও আজ তার ধর্মীয় উগ্রবাদের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে অনেকটাই চিহ্নিত এবং নিন্দিত।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *