বর্তমান বিশ্বে জঙ্গিবাদের এই বিপুল উত্থান কিসের কারণে? সে কি দারিদ্র্যের কশাঘাত, ধর্মীয় উন্মাদনার যুক্তিহীন উন্মেষ, রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের কুটিল অভিপ্রায়, নাকি সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবরুদ্ধ বিদ্রোহে?

অনেকে আধুনিক জঙ্গিবাদের মূল কারণকে রিলিজিয়াস ফ্যানাটিজম বা ধর্মীয় উন্মাদনার বিস্তার বলে বিশ্বাস করেন। ধর্মীয় উগ্রতা জঙ্গিবাদের পরিবেশ সৃষ্টিতে অনুকূল ভূমিকা তৈরি করতে অবশ্যই সহায়ক হয়। কিন্তু সেটাই কি শুধু মূল কারণ? পৃথিবীর নানা ধর্মমতে এমন অজস্র অনুসারী রয়েছেন, যাঁরা নিজেরা ধর্মান্ধ হয়েও কোনো ধরনের সহিংস নীতির প্রতি মোটেই বিশ্বস্ত নন। জঙ্গিবাদকে আদপেই নিজেদের বিশ্বাস প্রচারের অস্ত্র হিসেবে তাঁরা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না। তাহলে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির পেছনে কোন অন্তর্নিহিত কারণগুলো বিরাজমান?এর নিগূঢ় উত্তর হলো, জঙ্গি মানসিকতা নিশ্চিতভাবেই সমাজের কিছুসংখ্যক মানুষের এমন এক সাইকোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য, যা শক্তিমান প্রভাবশালীদের কাছ থেকে আর্থিক, নৈতিক, আদর্শগত ও আইনগত আনুকূল্য লাভ করে মানবসমাজের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে এবং পরিস্থিতিতে একেকভাবে বাস্তবতা পায়। বাস্তবে তার সক্রিয় প্রকাশ তখনই ঘটে, যখন সেই মনস্তত্ত্ব দেশীয় শক্তি অথবা আন্তর্জাতিক মহলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা ধর্মীয় আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়।তাই দেহ-মনের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির পেছনে যেমন কার্যকারণ সম্বন্ধ খুঁজে সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দান করা চলে, জঙ্গিবাদকে সব ক্ষেত্রেই সেভাবে বিশ্লেষণ করা যায় না। জঙ্গিবাদের বৈজ্ঞানিক কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ও তাই অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। যা-ই হোক, সন্ত্রাস নিমূর্লের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সন্ত্রাসবাদের বিপুল উত্থানে বিশ্বের মধ্যে তৈরি হয়েছে আরও একটি বিশ্ব। তার নাম জঙ্গি বিশ্ব। কারণ, জঙ্গি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বজুড়ে এত বেশি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি করে চলেছে তাদের সদস্য সংখ্যা, তার প্রভাব পৃথিবীর প্রতিটি কোণেই আলোড়ন তুলেছে।বিশ্ব জঙ্গিবাদ মানবসমাজকে ঠেলে দিতে চাইছে এমন একটি অন্ধকার সময় ও স্থানের দিকে, যেখানে গণতান্ত্রিক সমাজের ধারণাগুলো বিলুপ্ত। যেখানে বিশ্বজনীন আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। সেটা তারা করতে চাইছে সমাজ কাঠামোতে ভাঙন ধরিয়ে চতুর কৌশলে মানবসমাজে বিভাজন সৃষ্টির মাধ্যমে। সভ্য মানুষের বিশ্বাস, সংস্কার কিংবা আচার আচরণের মূলে কুঠারাঘাত দিয়ে ভয়াল বিপর্যয় ঘটিয়ে নিত্যনতুন নির্মম সন্ত্রাস, অমীমাংসিত হত্যাকাণ্ড ও অরাজক পরিস্থিতিতে অসহনীয় পারিপার্শ্বিকতা তৈরি করে। যাতে নাগরিক মানুষের মনে সন্দেহ, সংশয়, আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি হয় এবং সুশীল সমাজে স্বাধীনতা ও সাধারণ মানুষের বাঞ্ছিত জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হতে হতে সামাজিক পরিবেশজুড়ে নেমে আসে মৃত্যুশীতল বিপর্যয়। কেননা সমাজবদ্ধ মানুষের সুস্থ চেতনাই মানব সভ্যতাকে এগিয়ে দেয় সুস্থতর ভবিষ্যৎ নির্মাণের দিকে। মানুষকে করে তোলে মানবিক গুণাবলির আদর্শের ধারক।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *